বাংলা ট্রিবিউন

হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে তুলে শনিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে আশকোনার হজ ক্যাম্পে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন হজযাত্রীরা। হজ অফিসারের দফতরেও নানা অভিযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন তারা। বিকাল পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন করে হজ ফ্লাইট বরাদ্দ পাওয়া নিয়েও ছিল অনিশ্চয়তা। হজ ক্যাম্পে অপেক্ষমাণ শত শত হজযাত্রী যখন এসব নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন, তখন হজ করতে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।

শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় বিজি-৯০৭৯ ফ্লাইটে হজ করতে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।

বিমানে ওঠার আগ মুহূর্তে ধর্মমন্ত্রীশনিবার দুপুর ২টার দিকে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে মিছিল করেন হজযাত্রীরা। যেসব হজ এজেন্সির মালিক প্রতারণা করেছেন তাদের বিচার ও হজে যাওয়ার নিশ্চয়তার দাবি জানান তারা। তাদের অভিযোগ, ইকো ট্রাভেল, মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন, সানজিদ ট্রাভেল, এনই এয়ার সার্ভিস, আল বালাক, সানজিদ ট্রাভেলসহ কয়েকটি এজেন্সি টাকা নিয়েও এখন টিকিট দিচ্ছে না।

অন্যদিকে, হজ অফিসারের কাছে গিয়েও লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন কোনও কোনও হজযাত্রী। তাদেরও অভিযোগ, টাকা দিয়েও তাদের হজে যাওয়া অনিশ্চয়তায়। মো. আব্দুল কুদ্দুস নামের এক হজযাত্রী বলেন, ‘আমি তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছি এনই এয়ার সার্ভিসের কাছে। তারা এখন আমার ফ্লাইটের টিকিট দিচ্ছে না।’ এনই এয়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে একই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মো. ইয়াছিন ভুইয়া ও মাজেদা খাতুন নামের দুই হজযাত্রী।

আশকোনায় হাজিদের বিক্ষোভঅনেক হজযাত্রীর অভিযোগ, হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকলেও ধর্মমন্ত্রীর কোনও খবরও নিতে আসেননি। এ প্রসঙ্গে হজযাত্রী আব্দুল মালেক বলেন, ‘হজ ক্যাম্পে তিন-চার দিন ধরে অপেক্ষা করেছেন এমন অনেক হজযাত্রীও আছেন। ধর্মমন্ত্রী বা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোনও কর্মকর্তা খবর নিতেও আসেননি।’

জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ১৫১১ ফ্লাইটটি যাওয়ার কথা ছিল বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে। ৩১৯ জন হজযাত্রীর যাওয়া কথা ছিল সেই ফ্লাইটে। সেই ফ্লাইটের অনেক যাত্রী বেলা ১১টায় এসে হাজির হন হজ ক্যাম্পে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তারা জানতে পারেন ফ্লাইটটি স্থগিত হয়েছে। তবে কোন সময়ে সেই ফ্লাইট যাবে– এ তথ্য দিতে পারছিলেন না হজ অফিসের কোনও কর্মকর্তা।

সাখাওয়াত হোসেন স্ত্রীসহ সেই ফ্লাইটে যাওয়া জন্য হজ ক্যাম্পে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘অব্যবস্থাপনারও একটা সীমা আছে। ফ্লাইট যদি বিলম্বিত হয়, তবে যাত্রীদের তা আগেই জানানো উচিত ছিল। একই সঙ্গে কোন সময়ে যাবে সেই তথ্যও যাত্রীদের জানানো উচিত ছিল।’ বিমান সূত্র জানায়, স্থগিত হজ ফ্লাইট বিজি ১৫১১ শনিবার রাত ১টায় ছেড়ে যাবে।

শনিবার বিকালে পর্যন্ত অনিশ্চয়তা ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন করে হজ ফ্লাইটের অনুমোদন পাওয়া নিয়ে। নতুন ফ্লাইটের অনুমোদন না পেলে শনিবার ছিল বিমানের হজ ফ্লাইট পরিচালনার শেষ দিন। যদিও শেষ পর্যন্ত বিমান ২৮ তারিখ পর্যন্ত আরও ৮টি হজ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পায়। হজ ফ্লাইট প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘২৮ আগস্ট পর্যন্ত বিমান হজ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে। ফলে যাদের ভিসা হয়েছে, তারা সবাই টিকিট পাবেন।’

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজ যাত্রীদের সংকট মোকাবিলা করতে আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। এজন্য এখনও আমি সৌদি আরবে যাইনি। হজ ফ্লাইটের শেষদিন পর্যন্ত এখানে থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাবো।’ হজ যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মূল সমস্যা সৃষ্টি করছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা হজযাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিলেও মূল এজেন্সিতে তা ঠিকমতো জমা দেয়নি। এর দায় এসে পড়েছে এজেন্সির ওপর। তারপরও হাবের পক্ষ থেকে এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে থেকে ইতোমধ্যে এক লাখ ১৫ হাজার ৭৩০ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৬০ হাজার ৯৯ জন এবং সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স ৫৫ হাজার ৬৩১ জন হজযাত্রী পরিবহন করছে।

চলতি বছরের হজ ফ্লাইট শুরু হয় গত ২৪ জুলাই। বাংলাদেশে থেকে হজযাত্রী পরিবহন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি রাষ্ট্রায়ত্ত সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স। এবছর হজ পালনের জন্য  বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করেছিলেন। ‍১ লাখ ২৬ হাজার ২৪৭ জন ভিসা পেয়েছেন। বিমান ৬৩ হাজার ৫০০ ও সাউদিয়া ৬৩ হাজার ৬৯৮ জন হজযাত্রী বহন করবে।

সূত্র জানায়, হজ ফ্লাইট শুরুর পর থেকে ভিসা জটিলতায় ও হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া না হওয়ার কারণে বিমানের ২৪টি এবং সৌদি অ্যারাবিয়ানের ৪টি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। হজ এজেন্সিগুলো অধিক মুনাফার লোভে দেরিতে মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুসারে, হজযাত্রীদের ফ্লাইটের আগেই সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করে এর রসিদ ও বিমানের টিকিট নিশ্চিত করে হজ অফিস থেকে ডিও লেটার নিতে হয়।